রাজশাহীতে কাফনে মোড়ানো শিশুর লাশ নেয়া হল মর্গে

রাজশাহীতে কাফনে মোড়ানো শিশুর লাশ নেয়া হল মর্গে

রাজশাহীতে কাফনে মোড়ানো শিশুর লাশ নেয়া হল মর্গে
রাজশাহীতে কাফনে মোড়ানো শিশুর লাশ নেয়া হল মর্গে

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় সাত বছরের একটি শিশুকে দাফনের জন্য সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। জানাজার জন্য লোকজনও এসেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব আয়োজন ভণ্ডুল হয়ে যায়।

জানাজার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাফনের কাপড়ে মোড়ানো শিশু মারুফ হাসানের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যায়। শুক্রবার দুপুরের দিকে বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুটির বাবা শাহাজাহান আলী, সৎ মা মুক্তা খাতুন, দুই চাচা আজিম ও কাজিম আলীকে থানায় নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মারুফ হাসান উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের শাহাজাহান আলীর দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। শিশুর মায়ের অভিযোগ, বাবা ও সৎ মা মিলে তার ছেলেকে হত্যা করেছে। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাবি, শিশুটিকে জ্বিনে মেরে ফেলেছে।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার সকালে শিশু মারুফ হাসানকে বাড়িতে সৎ মায়ের কাছে রেখে শাহাজাহান আলী কাজের জন্য বাইরে যান। শিশুটি অস্বাভাবিক আচরণ করছে বলে সৎ মা মুক্তা বেগম মুঠোফোনে তার স্বামীকে জানান। স্বামীর পরামর্শে স্থানীয় কবিরাজের কাছ থেকে আনা পানি শিশুর নাকে মুখে ছিটিয়ে দেয়া হয়। এতে কোনো উন্নতি হয়নি।

একপর্যায়ে শিশুটি অচেতন হয়ে পড়ে। এসময় চাচা ও প্রতিবেশীরাও ছুটে এসে শিশুর চেতনা ফেরানোর চেষ্টা করেন। তবে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। সকাল সাড়ে সাতটার দিকে শিশুটি মারা যায়।

মৃত্যুর পর সকাল সাড়ে ১০টায় লাশ দাফনের আয়োজন করা হয়। এজন্য কাফনের কাপড়ে মোড়ানোসহ সব প্রস্তুতিও নেয়া হয়। অনেক স্বজনও বাড়িতে আসেন লাশ দাফনের জন্য। দাফনের আগ মুহুর্তে ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে মা মারুফা বেগমও স্বামীর বাড়ি থেকে ছুটে আসেন। ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশুর লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ রামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

স্থানীয়রা জানায়, শাহাজাহান আলীর তিন স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর মারুফা বেগমকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। তাদের প্রথম সন্তান মারুফ হাসানের জন্ম হয়। দুই বছর আগে মারুফার সঙ্গে শাহাজাহানের ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর মারুফ হাসান তার বাবার কাছে থাকত। আর এক বছর আগে মুক্তা খাতুন (২২) নামের এক নারীকে তৃতীয় বিয়ে করে রাজশাহী শহরে বসবাস শুরু করেন শাহাজাহান। তবে পাঁচ মাস আগে গ্রামের বাড়ি বিনোদপুরে ফিরে এসে দিনমজুরির কাজ শুরু করেন শাহাজাহান। তখন থেকে সৎ মায়ের কাছেই থাকত মারুফ হাসান।

শাহাজাহান আলী, মুক্তা ও কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, মারুফ প্রায়ই অস্বাভাবিক আচরণ করত। মাঝে মধ্যে অচেতন হয়ে যেত। তাকে জ্বিনে ধরেছে বলে এতদিন ঝাড়ফুঁক দেয়া হত। তাদের ধারণা, জ্বিনেই তাকে মেরে ফেলেছে। শিশুকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি।

বাগমারা থানার এসআই রিপন কুমার সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চারজনকে থানায় আনা হয়েছে। এখনো মামলা হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে শিশুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন বা হত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

মতিহার বার্তা / ইএবি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply